প্রত্যয় নিউজ ডেস্ক: চট্টগ্রাম নগরের কাট্টলীতে শর্ট সার্কিটের আগুনে দগ্ধদের মধ্যে আশঙ্কাজনক ছয়জনকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন বাকি দুইজন। আশঙ্কামুক্ত থাকায় একজনকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
সোমবার (৯ নভেম্বর) দুপুরে গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানিয়েছেন চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবির। চমেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে আগুনে দগ্ধদের দেখতে এসে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে রোববার (৮ নভেম্বর) রাতে নগরের আকবর শাহ থানাধীন উত্তর কাট্টলি মরিয়ম ভবনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
আগুনে দগ্ধরা হলেন- মিজানুর রহমান (৪২), সাইফুল ইসলাম (২৫), বিবি সুলতানা (৩৬), মানহা (২), মাহের (৮), পেয়ারী বেগম (৬৫), সুমাইয়া (১৮), রিয়াজুল ইসলাম (২২), সালমা জাহান (২১)।
এদের মধ্যে প্রথম সাতজন একই পরিবারের সদস্য। তাদের মধ্যে পেয়ারী বেগম মারা গেছেন। আর রিয়াজুল-সালমা দম্পতি ওই বাসায় সাবলেট থাকতেন।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবির বলেন, ‘রাত সাড়ে ১১টার দিকে আমরা দুর্ঘটনার বিষয়ে জানতে পারি। মোট নয়জন পেশেন্ট আমাদের হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এর মধ্যে একজন পেশেন্ট ছিল ভালো। ভালো বলতে পাঁচ পারসেন্ট বার্ন ছিল। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। বাকি আটজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এদের মধ্যে সাতজনের শ্বাসনালী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটি খুব ঝুঁকিপুর্ণ। এর মধ্যে ৬৫ বছরের এক বৃদ্ধা মহিলার শরীরের ৬০ শতাংশ পুড়ে গেছে। তাকে আমরা আইসিইউতে চিকিৎসা দিচ্ছি (ইতোমধ্যে তিনি মারা গেছেন)। বাকিদের কারো ৪৫ শতাংশ, কারো ৩০ শতাংশ পুড়ে গেছে।’
চমেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক ডা. রফিক উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘দুর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে দুটি পরিবার রয়েছে। এর মধ্যে মিজানুর রহমানের পরিবারের এক সদস্যের অবস্থা খারাপ হওয়ায় বাকি পাঁচজনকেও তারা নিজ দায়িত্বে ঢাকা নিয়ে যাচ্ছেন। রিয়াজুল ইসলাম ও সালমা জাহান দম্পতিকে আমরাই চিকিৎসা দিচ্ছি।’
দুর্ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসনের কমিটি
সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আগুনে দগ্ধদের দেখতে চমেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে আসেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসেন। এ সময় তিনি দুর্ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠনের ঘোষণা দেন।
জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘কাট্টলী এলাকার একটি ভবনে শর্ট সার্কিট থেকে সৃষ্ট আগুনে একটি পরিবারের প্রায় সবাই দগ্ধ হয়েছেন। একজন বাদে বাকি সবার অবস্থায়ই আশঙ্কাজনক। প্রাথমিকভাবে ফায়ার সার্ভিস থেকে জানা গেছে, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় চার সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি ইতোমধ্যে গঠন করেছি। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে এই কমিটিতে পুলিশের একজন, ফায়ার সার্ভিসের একজন ও বিদ্যুৎ বিভাগের একজন সদস্য থাকছেন।’
তিনি বলেন, ‘তদন্ত কমিটি দেখবে আগুন লাগার প্রকৃত কারণ কী। সেক্ষেত্রে বাড়িওয়ালার কোনো গাফিলতি ছিল কি-না বা অন্য কোনো কারণ আছে কি-না, তা খতিয়ে দেখা হবে।’
দুর্ঘটনায় আহত মিজানুর রহমানের আত্মীয় সাইফুল বলেন, ‘মরিয়ম ভবনের ওই ফ্ল্যাটে মিজানুর রহমান তার দুই সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে বসবাস করতেন। এছাড়া একটি রুমে সাবলেট থাকতেন রিয়াজুল ইসলাম ও সালমা জাহান দম্পতি। কয়েকদিন আগে নোয়াখালী থেকে মিজানুর রহমানের মা পেয়ারী বেগম ও বাকিরা বেড়াতে এসেছিলেন।’
আগ্রাবাদ ফায়ার স্টেশন অফিসার কফিল উদ্দিন জানিয়েছেন, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলে গিয়ে আমরা এই আলামত পেয়েছি। ওই ফ্ল্যাটের অনেকগুলো পয়েন্টে একসঙ্গে স্পার্কের ঘটনা ঘটে। ফলে সারা ঘরে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে যায়।